রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় ,গত আট মাসে ৩২০টি পোশাক কারখানা বন্ধ
গত আট মাসে ৩২০টি পোশাক কারখানা বন্ধ
বাংলার জমিন ডেস্ক :
আপলোড সময় :
১৭-১০-২০২৩ ০৭:০৯:২২ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
১৭-১০-২০২৩ ০৭:০৯:২২ অপরাহ্ন
ফাইল ছবি :
চলতি বছরের প্রথম আট মাসে তিন শতাধিক পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। একই সময়ে ক্রয়াদেশ কমেছে ২০ ভাগ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় বিশ্বব্যাপী পোশাকের চাহিদা কমেছে। আর ব্যাংকিং জটিলতার কারণে বন্ধ হয়েছে ছোট-বড় এসব পোশাক কারখানা। তবে একই সময়ে ১১৪টি নতুন পোশাক কারখানা চালু হয়েছে। এসব কারখানায় কর্মসংস্থান হয়েছে ১২ হাজার ৫০০ শ্রমিকের।
রপ্তানিকারকরা বলেছেন, টাকার অবমূল্যায়ন এবং বৈশ্বিক চাহিদা কমার পাশাপাশি আরও কিছু সমস্যায় বিদেশি বাজারের জন্য পোশাক উৎপাদনকারী এসব কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। ইউরোপ ও আমেরিকায় মূল্যস্ফীতি রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছেছে। ফলে সেখানকার ক্রেতারা ভোগ্যপণ্যে ব্যয় কমিয়ে দিয়েছেন। এতে কমেছে তৈরি পোশাকের চাহিদা। এ কারণে রপ্তানি আদেশ কমিয়ে দিয়েছে ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো।
গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি ও উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে বিদেশি ক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলোর সহযোগিতা চেয়ে চিঠি দিয়েছেন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান। চিঠিতে সার্বিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে পোশাকের ক্রয়াদেশের ক্ষেত্রে শর্ত হিসেবে নির্দিষ্ট বিদেশি প্রতিষ্ঠান থেকে কাপড় ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক সামগ্রী কেনার শর্ত শিথিল করার অনুরোধ করেছেন তিনি।
শিল্প পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর জানুয়ারি থেকে আগস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত শিল্প পুলিশ-এলাকার ৩২০টি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ পোশাক কারখানাগুলোর মধ্যে ৬০টি বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সদস্য, ১৬টি বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সদস্য, ৯টি বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমইএ) সদস্য এবং পাঁচটি বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের সদস্য।
বাকি ২২৩টির বেশির ভাগই কুটিরশিল্প প্রতিষ্ঠান (নন-আরএমজি)। বন্ধ পোশাক কারখানাগুলোতে প্রায় ৪৫ হাজার কর্মী কাজ করতেন। বিজিএমইএর সদস্য ৬০টি কারখানায় কাজ করতেন ১৬ হাজার ৯৪৩ জন কর্মী। নন-আরএমজি কারখানাগুলোতে নিযুক্ত ছিলেন ১৬ হাজার ১৭৩ জন কর্মী। তবে সুখবর হলো-এই সময়ে ১১৪টি নতুন কারখানা চালু হয়েছে। সেখানে নতুন করে কর্মসংস্থান হয়েছে ১২ হাজার ৫০০ জন শ্রমিকের। কারখানা চালু করার জন্য ৬০টি কারখানায় প্রায় ১০ হাজার কর্মী পুনরায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ৩৮টি তৈরি পোশাক খাতের এবং ২২টি টেক্সটাইল খাতের। একই সময়ে ১১৪টি নতুন পোশাক কারখানা চালু হয়েছে। এসব কারখানায় কর্মসংস্থান হয়েছে ১২ হাজার ৫০০ শ্রমিকের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি ফারুক হাসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত ক্রয়াদেশ ২০ শতাংশ কমেছে। খুবই কঠিন, সব দিক থেকে চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে আমাদের। এই ৩টা মাস রপ্তানি আয় ধরে রাখা আমাদের জন্য সহজ নয়; বরং খুবই কঠিন। তিনি আরও বলেন, ১টা ২টা করে কারখানা বন্ধ হতে থাকে। তবে সব কারখানাই সক্ষমতার চেয়ে অনেক কম কাজ করছে। এই মুহূর্তে অর্ডার আছে, একেবারে যে নেই তা নয়।
বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, টাকা ও ডলারের বিনিময় হারের আকাশ-পাতাল ব্যবধানের ক্ষতির কারণে অনেক ছোট ছোট কারখানা টিকে থাকতে পারেনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, পোশাক কারখানার ১৪ শতাংশের বেশি ব্যাংক খেলাপি ছিল। তিনি আরও বলেন, চলতি বছর বিকেএমইএর প্রায় ১০০ সদস্য তাদের সদস্যপদ নবায়ন করেননি। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৮০০'র মতো। তারা এখন ব্যবসা করছেন না।
মুদ্রাস্ফীতির প্রভাবে আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের কাছ থেকে ক্রয়াদেশ কমে যাওয়ায় আগামী ছয় মাস দেশের পোশাকশিল্পের জন্য চ্যালেঞ্জিং হবে বলে মনে করছেন তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকরা। এদিকে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানি কমেছে ২১ দশমিক ৭৭ শতাংশ। বাং/প্রতি
নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Jamin
কমেন্ট বক্স